ক্ষত
-বিশ্বদীপ মুখার্জী
পর্ব- ৫
‘এটাকে এক ধরনের মানসিক ব্যাধি বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে।’ মৃত্যুঞ্জয় বলতে আরম্ভ করলো- ‘নিজের ক্ষতি করা, নিজেকে আঘাত দেওয়া এক ধরনের মানসিক রোগ। মেডিকাল সায়েন্সে এই রোগের দুটো নাম। প্রথম হলো -সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডার, আর দ্বিতীয় নাম হলো- বি.পি.ডি. মানে বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার। এই রোগে মানুষ নিজেকে ক্ষতি করে। হয়তো সে এতে আনন্দ পায়, হয়তো নিজের শরীরের ব্যথাকে উপভোগ করে।’
‘তার মানে তুমি বলতে চাও যে প্রতীক সেই মানসিক রোগে আক্রান্ত?’ জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘ইয়েস মাই ডিয়ার। প্রতীক বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। সব থেকে বড় কথা হলো সে জানে যে সে এই বীভৎস রোগের শিকার।’
‘কী করে বুঝলে তুমি যে সে জানে?’
‘তার ঘরে মেডিকালের বই দেখে। জানি না কী কারণে সেই বইগুলোকে সে পুড়িয়ে ফেলেছে। যে বইগুলো প্রতীকের ঘর থেকে আমি পাই, সেগুলো সাধারণত সাইক্রিয়াটিস্টরা পড়ে।’
‘আর ওই চিরকুটগুলোর মানে?’ প্রশ্নের পাহাড় জমে আছে অন্বেষার মনে।
‘ভালো করে ভেবে দেখো অন্বেষা। মানে তুমিও বুঝতে পারবে। প্রথম চিরকুট- এস-1, দেয়াল …. দেয়ালে রক্তের দাগ। এখানে ‘এস’ এর মনে কী?’ এস ‘মানে স্টেপ । পুরো মানে হলো স্টেপ-1, দেয়াল। শরীরে আঘাতের আরম্ভ হয়ে দেয়াল থেকে। দেয়ালে মাথা ঠুকে নিজের কপাল ফাটানো। এস-2 , মানে স্টেপ-2 হলো বেল্ট। আমার বিশ্বাস তার শরীরে বিশেষ করে পিঠে বেল্টের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাবে। এস-3, মানে স্টেপ 3 হলো ব্লেড আর ছুরি। হাত কাটা, গাল কাটা এই সব।’
‘তাহলে স্টেপ- 4 রিক্ত কেন?’
ঈষৎ গম্ভীর হয়ে মৃত্যুঞ্জয় বলল- ‘স্টেপ- 4 হলো চরম আঘাত। সেই চরম আঘাতটা কী সেটা এখনও হয়তো প্রতীক ঠিক করতে পারেনি। অন্বেষা, নেশা এক অদ্ভুত ফিলিংস। আমরা নেশা করি, সিগারেট, মদ ইত্যাদি। এটাকে তুমি সাধারণ ভাবে চিন্তা করে দেখো। আমরা যখন মদ খেতে শিখি, তখন একটা বা দু’টো পেগে আমাদের নেশা হয়ে যেতো। কিন্তু সেই পর্যায় নেশা করতে গেলে আমাদের এখন পাঁচ,ছয় কিম্বা সাত-আট পেগও লেগে যায়। সিগারেট আমি এক সময় দিনে দু’টো কিম্বা তিনটে খেতাম, এখন এক প্যাকেটের বেশি খাই। তার মানে ব্যাপারটা হলো নেশার পরিমান দিনে দিনে বেড়ে যায়। নিজেকে আঘাত করাটা প্রতীকের এক ধরনের নেশা। প্রথমে দেয়ালে মাথা ঠুকে চোট লাগাতো। আস্তে আস্তে তাতে তৃপ্তি কমে গেলো। তার পর শুরু হলো বেল্ট দিয়ে নিজের শরীরে প্রহার। কিছু দিন পর এতেও তার মন ভরলো না। নেক্সট হলো ব্লেড, ছুরি ইত্যাদি..’
ভয়ার্ত কন্ঠে অন্বেষা জিজ্ঞেস করলো- ‘তাহলে শেষ তৃপ্তি সে কিসে পাবে?’
‘ওই যে বললাম, জল। খুব সম্ভব জলের মাধ্যমে প্রতীক যে আঘাতটা পাবে, সেটা হবে তার শেষ এবং চরম তৃপ্তি।’
‘কিন্তু….কিন্তু প্রতীকের এই অদ্ভুত রোগটা হলো কেন?’
‘সেটা জানার জন্য প্রতীকের অতীতের বিষয় জানা দরকার। তবে বেশ কিছু কারণ হতে পারে সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডারের। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, অতীতে অত্যাধিক টর্চার হওয়া, সম্পর্কের টানাপোড়ন, এই ধরেনের বেশ কিছু কারণ হতে পারে। এখন প্রতীকের এই রোগ হওয়ার মুখ্য কারণ কী, সেটা এখানে বসে বলা সম্ভব নয়। সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডার দু’ রকমের হয়। একটা নন্ সুইসাইডাল সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডার এবং সুইসাইডাল সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডার। নন্ সুসাইডল সেল্ফ ইনজুরি ডিসঅর্ডার যখন নিজের সীমা লঙ্ঘন করে তখন সেটা সুসাইডালে পরিণত হয়। যেমন তোমাকে নেশা বৃদ্ধির উদাহরণ দিলাম, ঠিক তেমনই। আশা করি প্রতীকের এখনও এই রোগটা সুসাইডল পর্যন্ত যায়নি।’
কথাটা শেষ করতেই বেজে উঠল মৃত্যুঞ্জয়ের মোবাইল। বিকাশ ফোন করেছে।
‘হ্যাঁ বলো বিকাশ।’
‘মৃত্যুঞ্জয়দা, প্রতীক এসেছিলো। সব দেখলো, শুনলো কিন্তু কিছু বলল না। নো রিয়্যাকশন। আমি তাকে বললাম যে পুলিশকে খবর দিতে যাচ্ছি, কিন্তু মানা করলো আমায়। নিজের ঘরে গিয়ে এদিক ওদিক দেখলো, কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো তার পর বেরিয়ে গেলো।’
‘কোথায়?’ উৎকন্ঠায় জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘জানি না। জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু জবাব দিলো না। এটাই তো ওর প্রবলেম, কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দেয় না।’
‘সাথে কিছু নিয়ে বেরিয়েছে কি?’
‘না, কিছুই না। খালি হাতে বেরলো। তবে বেরোবার সময় তার মুখটা কেমন অদ্ভুত ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। সত্যি বলতে, এতো দিন ধরে দেখছি তাকে, কিন্তু এমন মুখ কোনো দিন দেখিনি। ভয় পেলাম, তাই ফোন করলাম তোমায়।’
‘বিকাশ, আমাদের বাঁচাতে হবে তাকে।’ কথাটা প্রায় চিৎকার করে বলল মৃত্যুঞ্জয়।
‘কিন্তু কেমন করে?’ জিজ্ঞেস করলো বিকাশ।
‘রাধিকা কোথায়?’
‘সে তো নিজের বাড়ি চলে গেছে।’
‘তাকে বাড়ি থেকে বেরোতে বলো। তুমি তার কোনো নিয়ারেস্ট পয়েন্টে দেখা করো তার সাথে। তারপর তোমরা গান্ধী সেতুর দিকে রওনা দাও।’
‘গান্ধী সেতুর দিকে!’ আশ্চর্য হলো বিকাশ।
‘হ্যাঁ, বেশি প্রশ্ন নয়। তাড়াতাড়ি করো। আমার মনে হয়ে সময় খুব কম আমাদের হাতে।’
কথা শেষ করে মৃত্যুঞ্জয় ফোন রেখে অন্বেষাকে বলল- ‘অন্বেষা, নিজের স্কুটি বার করো। রাইট নাউ।’
‘কী হলো?’ অন্বেষার মুখও ফ্যাকাসে।
‘বললাম না সময় নেই। হরিআপ।’
সূর্যাস্ত হওয়ার অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। পাটনার রাস্তাঘাট এখন স্ট্রিট লাইটে ঝলমল করছে। অফিস ফেরার সময়, তাই রাস্তায় ভিড় বেশি। স্কুটির চালক সিটে বসে আছে মৃত্যুঞ্জয় এবং তার পেছনে অন্বেষা। গান্ধী সেতুর যাওয়ার রাস্তা অন্বেষা বলে দিচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়কে। কখনও স্কুটি আশি কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার গতি নিয়ে তীর বেগে ছুটে যাচ্ছে, তো কখনও কুড়ি কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় নেমে আসছে তার গতি। হঠাৎ পেছন থেকে অন্বেষা জিজ্ঞেস করলো- ‘তুমি কি শিওর যে প্রতীক সেখানেই গেছে?’
‘একটা অনুমান মাত্র। আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। প্রতীক নেলসন হয়তো এটা আন্দাজ করতে পেরেছে যে চোর বিকাশের নয় তার ঘরেই ঢুকেছিলো। আর যে ঢুকেছিলো সে যে আদৌ চোর নয়, সেটাও হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছে সে। সে হয়তো বুঝতে পেরেছে যে তার ক্ষতর সন্ধান করতেই কেউ এই কান্ড করেছে। প্রতীকের সব থেকে আগে সন্দেহ যাওয়া উচিত বিকাশের ওপরে। এবার তাকে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যেটা সে চায় না। যারা মদ্যপান করে তারা মাঝে মাঝে নিজের দুঃখ, কষ্ট ভুলবার জন্য অত্যাধিক মদ্যপানের শরণাপন্ন হয়। চরম পর্যায় নেশা, চরম পর্যায় তৃপ্তি। যতদূর মনে হয়ে এখানেও চরম পর্যায় তৃপ্তির সময় চলে এসেছে।’
বিকাশের ফোন এলো মৃত্যুঞ্জয়ের মোবাইলে। মৃত্যুঞ্জয়ের মোবাইল অন্বেষার হাতে। অন্বেষা কল রিসিভ করলো। ওপার থেকে বিকাশ বলল- ‘আমরা মিঠাপুর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে গেছি।’
‘এগিয়ে বাঁ দিকে টার্ন নাও। আমরা সেখানেই আছি।’ অন্বেষা বলল।
স্কুটি দাঁড় করালো মৃত্যুঞ্জয়। বাইপাস রোড এটা। পাশেই বাস স্ট্যান্ড। প্রচুর বাসের যাওয়া-আসা এই রাস্তায়। গান্ধী সেতু পাটনা থেকে শুরু করে হাজীপুর পর্যন্ত চলে গেছে। গঙ্গা নদীর ওপর প্রায় ছ’কিলোমিটার লম্বা এই ব্রিজ সাউথ ও নর্থ বিহারকে এক করার মুখ্য পথ। মহাত্মা গান্ধী সেতুর থেকে আর বেশি দূর নেই তারা। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিকাশ ও রাধিকা সেখানে যথাস্থানে পৌঁছালো। সবাই মিলে একসাথে এগোলো এবার।
‘কী ব্যাপার মৃত্যুঞ্জয়দা? হঠাৎ আমাদের এখানে ডাকলে?’ মৃত্যুঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলো বিকাশ।
‘প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারবে তাই ডাকলাম।’ মৃত্যুঞ্জয় জবাব দিলো।
‘সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু এখানেই কেন?’
‘যদি আমার অনুমান ঠিক থাকে তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবে।’
বেশিক্ষণ লাগলো না তাদের মহাত্মা গান্ধী সেতু পৌঁছাতে। তীর বেগে সেতুর ওপরে উঠলো তাদের দু’ চাকা। খানিক এগোতেই তারা দেখতে পেলো ব্রিজের রেলিংএর ধারে মাথা নত করে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। পরনের জামাকাপড়ে তাকে চিনতে পারলো প্রত্যেকে। সে আস্তে আস্তে রেলিংএর গায়ে পা দিয়ে উঠবার চেষ্টা করছে।
‘প্রতীক….প্রতীক ….! ‘ চিৎকার করলো বিকাশ। কিন্তু গাড়ির আওয়াজে ডেবে গেলো বিকাশের চিৎকার। স্কুটির গতি অনেক কমিয়ে দিয়েছে মৃত্যুঞ্জয়।
‘না, চিৎকার করে লাভ নেই।’ বিকাশকে কথাটা বলেই স্কুটির গতি আরও অল্প করলো মৃত্যুঞ্জয়। অন্বেষাকে বলল- ‘অন্বেষা , আমি স্কুটি থামতেই নেমে যাবো। স্কুটি তুমি হ্যান্ডেল করবে।’
‘ঠিক আছে।’ অন্বেষা একমত।
যেমন কথা তেমন কাজ। স্কুটি থেকে নেমে হেলমেট খুলে অন্বেষার হাতে দিয়েই মৃত্যুঞ্জয় দৌড় দিলো প্রতীকের দিকে। ততক্ষণে প্রতীক রেলিংএর প্রায় অনেকটাই চড়ে গেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের পেছন পেছন অন্বেষা, বিকাশ, রাধিকাও সে দিকে দৌড় দিলো। জলে ঝাঁপ দেওয়ার শব্দ তাদের কানে এলো। গাড়ির হর্নের শব্দের দরুণ খুব ক্ষীণ আওয়াজ এলো তাদের কানে। জলে ঝাঁপ দেওয়ার শুরুতে একটা শব্দ, কিছু সেকেন্ড পরেই তাদের কানে আরও এক শব্দ এলো।
‘মৃত্যুঞ্জয়দা!’ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়লো অন্বেষা।
প্রতীকের জলে ঝাঁপ দেওয়ার কিছু সেকেন্ড পরেই ঝাঁপ দিলো মৃত্যুঞ্জয়। দৃশ্যটা এখনও চোখের সামনে ভাসছে অন্বেষার। মৃত্যুঞ্জয়ের নাম ধরে চিৎকার করে দ্রুত বেগে ছুটে গেলো সে। গঙ্গা নদী থেকে প্রায় চল্লিশ ফিটের উচ্চতা ব্রিজের। নিচে ঝাঁপ দিলে বেঁচে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই অল্প। মৃত্যুঞ্জয়কে ঝাঁপ দিতে দেখে চোখে প্রায় অন্ধকার দেখছিলো অন্বেষা। ব্রিজের ওপর থেকে অন্বেষা দেখতে পেলো, জলে পাগলের মতো হাত পা ছুঁড়ছে মৃত্যুঞ্জয়। বিকাশ বুঝতে পারলো সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। কিছু একটা শেষ চেষ্টা তাকে করতেই হবে। অন্বেষার অবস্থা যে ভালো নয় সেটা বুঝতে পেরেছিলো বিকাশ। রাধিকাকে সে বলল- ‘তোমাকেই সামলাতে হবে একে। আর এখানে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলে কিছু হবে না। স্কুটি আর বাইক এখানেই থাক। যা হবে দেখা যাবে। আমাদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হবে। তাড়াতাড়ি করো, হাতে সময় খুব কম।’
ব্রিজের মুখেই সিঁড়ি। সেটা দিয়ে নিচে নেমে এলো তারা। উর্ধশ্বাসে ছুটে চলল গঙ্গার ঘাটের দিকে। ঘাটটা বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। যখন তারা ঘাটে পৌঁছালো দেখতে পেলো তিনটে লোক মিলে এক অচেতন ব্যক্তিকে ধরে বেঁধে ঘাটে নিয়ে আসছে। অচেতন ব্যক্তির সংখ্যা এক, বুকটা কেঁপে উঠল অন্বেষার। কে সেই অচেতন লোকটা? প্রতীক, নাকি মৃত্যুঞ্জয়? যারা তাকে ধরে বেঁধে তুলে নিয়ে আসছে, তারা নিশ্চয়ই মাঝি। হৃদস্পন্দন ক্রমে বাড়ছিল অন্বেষার। অচেতন অবস্থার লোকটা বেঁচে আছে তো? ঘাটের পাশে এক গাছের নিচে তাকে শুইয়ে দেওয়া হলো। বিকাশ ও রাধিকা লঘু কদমে সে দিকে এগিয়ে গেলো। এগোতে পারেনি অন্বেষা। আতঙ্কে তার পা যেন পাথরের ন্যায় এক জায়গায় স্থির হয়ে গিয়েছিলো। মাঝিরা নিজেদের মধ্যে কি সব কথা বলছিলো। অন্বেষার সাথে তাদের দূরত্ব খুব একটা বেশি ছিলো না, তাও অন্বেষার মনে হলো যেন তাদের কথা বহু দূর থেকে কানে ভেসে আসছে। হঠাৎ বিকাশের গলা শুতে পেলো সে।
‘অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে। প্রচুর রক্ত বেরিয়েছে।’
মাঝিদের মধ্যে এক জন বলল- ‘আপনাদের লোক? নিয়ে যান বাবু। আর পারি না আমরা। রোজ রোজ কেউ না কেউ জলে ঝাঁপ দেবে আর আমরা বাঁচাতে দৌড়াব। কী করবো? চুপচাপ বসে থাকতেও পারি না। মনুষ্যত্ব বলে একটা জিনিস আছে তো।’
কথাটাটা বলে সে উল্টো দিকে চলে গেলো। অন্বেষা দেখলো, আরেকটা মাঝি তার সঙ্গ নিয়ে এগিয়ে গেলো তার সাথে। রাতের অন্ধকারের কারণে কারুর চেহারাই স্পষ্ট দেখতে পেলো না অন্বেষা। কিন্তু, মাঝি তো তিন জন ছিলো। ফিরে গেলো দু’জন। আরেক জন কোথায়? অন্বেষা দেখলো, রাধিকা এগিয়ে আসছে তার দিকে। তার কাছে এসে রাধিকা বলল- ‘বিকাশ অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করেছে।’
‘ক….ক….কে এটা?’ কোনো ক্রমে জিজ্ঞেস করলো অন্বেষা।
‘প্রতীক। মাথা নাকি ফেটে গেছে। অনেক রক্ত বেরিয়েছে। আমি কাছে গিয়ে দেখিনি, বিকাশ বলল।’
রাধিকার জবাবে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল অন্বেষার। প্রতীককে পাওয়া গেলো, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় কোথায়? মৃত্যুঞ্জয়কে কি পাওয়া গেলো না। গলা শুকিয়ে গেলো অন্বেষার। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছিলো তার। হঠাৎ নিজের পেছন থেকে সেই চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেলো সে।
‘চেষ্টাটা অবশেষে সফল হলো। কি বলো, অন্বেষা।’
পেছনে ফিরতেই আতঙ্ক আর খুশি মিশে একাকার হয়ে গেলো অন্বেষার হৃদয়ে। অনেক চেষ্টা করেও নিজের চোখের জল সে আটকে রাখতে পারলো না। ছুটে গেলো মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে। অন্বেষার এহেন অবস্থা দেখে মৃদু হেসে মৃত্যুঞ্জয় বলল- ‘তোমার কী মনে হলো, আমি গেলাম? না অন্বেষা, মৃত্যুঞ্জয় এতো সহজে যাবে না।’
দুপুর বেলা। এক বেসরকারী হাসপাতালের আই.সি.ইউ. কেবিনের সামনে বসে আছে অন্বেষা, রাধিকা, বিকাশ ও মৃত্যুঞ্জয়। খানিক আগেই ডক্টর এসে বলে গেছেন যে প্রতীক ইজ কমপ্লিটলি আউট অফ ডেঞ্জার। কিন্তু এখনও জ্ঞান ফেরেনি তার। মাথার পেছনে লেগেছিলো অল্প আঘাত। সেই থেকে নিজের জ্ঞান হারিয়েছে সে। ব্রেন স্ক্যান করা হয়েছে। রিপোর্ট নর্মাল। ডক্টরের বিশ্বাস কিছুক্ষণের মধ্যে নিজের জ্ঞান ফিরে পাবে প্রতীক নেলসন। তা ছাড়া কপালে মোট দশটা স্টিচ লেগেছে তার। ভেঙ্গেছে ডান পা’টাও। মৃত্যুঞ্জয়ের যে আঘাত লাগেনি তা নয়। কপালে অল্প আঘাতের সাথে সাথে বাঁ হাত ভেঙ্গেছে তার।
‘এতো উঁচু থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা যে খুব কমে যায় সেটা আর বলে দিতে হয় না। আমার মনে হয়েছিল যে প্রতীক হয়তো সাঁতার জানে না। সাঁতার জানলে সে জলে ঝাঁপ দিতো না। মৃত্যুকে সামনে দেখে অজান্তেই তার হাত পা চলতে শুরু করতো। শেষ তৃপ্তি সে আর পেতো না। প্রতীককে বাঁচাবার আমার কাছে একটাই উপায় ছিলো। প্রতীকের সাথে সাথে জলে ঝাঁপ দেওয়া। আমি তাই করলাম। আমি যদি অল্প দেরি করতাম, তাহলে প্রতীককে জীবিত অবস্থায় ফেরত নিয়ে আসা হয়তো সম্ভব হতো না।’ হাসপাতালে বসে কথাটা বলল মৃত্যুঞ্জয়।
‘এমন করো না মৃত্যুঞ্জয়দা। তোমাকে ওই ভাবে ঝাঁপ দিতে দেখে আমার যে কী অবস্থা হয়েছিল, সেটা শুধু আমি জানি।’ বলল অন্বেষা।
‘এতো ভয় পেলে চলে না, সোনা আমার। তদন্ত করতে গেলে অনেক বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। তার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।’
হাসপাতালে পুলিশ এসেছিলো। মৃত্যুঞ্জয় কথা বললো তাদের সাথে। মৃত্যুঞ্জয় জানে পুলিশের সাথে কী ভাবে কথা বলতে হয়। পুলিশকে ম্যানেজ করতে খুব ভালো পারে সে। মৃত্যুঞ্জয়ের ফিরে আসার পর আই.সি.ইউ. এর সামনে রাখা এক বেঞ্চির দিকে এগিয়া গেলো অন্বেষা। এক বৃদ্ধপ্রায় লোক মাথা হেঁট করে সেখানে বসে আছে। তার কাঁধে হাত রেখে অন্বেষা বললো- ‘আপনি উঠুন, মিস্টার নেলসন। চলুন আমার বাড়ি। স্নান করে কিছু খেয়ে বরং রেস্ট নিন আপনি। আপনার শরীরটাও তো ভালো দেখছি না।’
প্রতীক নেলসনের অতীত
…………………………………………..
সন্ধ্যে বেলায় বাড়ির ছাদে বসে আছে তারা। মৃত্যুঞ্জয়, অন্বেষা এবং প্রতীক নেলসনের বাবা জোসেফ নেলসন। রাধিকা নিজের বাড়িতে। প্রতীকের সাথে হাসপাতালে আছে বিকাশ পান্ডে। কিছুক্ষণ আগেই হাসপাতাল থেকে খবর এসেছে যে প্রতীকের জ্ঞান ফিরেছে। বিকাশকে চিনতে পেরেছে সে। এখন অনেকটাই সুস্থ প্রতীক।
বাড়ির ছাদে তিনটে চেয়ারে বসে আছে তিন জনে। সামনে একটা ছোট্ট গোল সেন্টার টেবিল। চায়ের সরঞ্জাম তাতে। মৃত্যুঞ্জয় এবং মিস্টার নেলসনের হাতে চা দিয়ে নিজের চায়ের কাপটা উঠিয়ে নিলো অন্বেষা। মিস্টার জোসেফ নেলসনের বয়স ষাটের ওপরে। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ছোট ছোট চোখগুলো যেন ভেতরে ঢুকে গেছে। এক মুখ খোঁচা খোঁচা দাড়ি গোঁফ। মৃত্যুঞ্জয় এবং অন্বেষা সেই আধ ছেঁড়া ছবিটার সাথে সামনে বসা ভদ্রলোকের মুখশ্রী মেলাবার চেষ্টা করছে। অল্পবিস্তর মিল যে আছে সেটা বলাই বাহুল্য। চায়ে দু’ চুমুক দিয়ে মিস্টার নেলসন বলতে শুরু করলেন- ‘প্রতীকের এই অবস্থার পেছেনে দায় একমাত্র আমি। আসলে প্রতীক আমার নিজের ছেলে না, সৎ ছেলে আমার। প্রতীকের মা, মানে কান্তা মিশ্রা আমাদের স্কুলেই কাজ করতো। বিধবা। আমি তখন যাকে বলা হয় ইয়াং। কান্তা দেখতে সুন্দরী ছিলো। যা হয়ে আর কি। প্রেমে পড়লাম তার। জানতাম আমি খ্রিস্টান, সে হিন্দু। বাড়িতে ঝামেলা হবেই। সে সব ঝামেলাকে হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা ছিলো আমার মধ্যে। আসল ঝামেলার সৃষ্টি করলো কান্তা নিজে। আমাকে একদিন সে বলল যে তার নাকি দু’বছরের একটা ছেলে আছে। আমি সেটা জানতাম। কোনো আপত্তি ছিলো না আমার। কিন্তু কান্তা একটা শর্ত রাখলো। আমি যেন বিয়ের পর তার থেকে কোনো বাচ্চার আশা না রাখি। তার ভয় ছিলো যে আমার নিজের সন্তান হয়ে গেলে তার ছেলেকে আমি ভালোবাসবো না। হাজার হোক, নিজের রক্ত তো নিজের রক্তই হয়। তখন আমি কান্তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া। তার সব শর্ত মেনে নিলাম। ভেবেছিলাম বিয়ের পর তাকে মানিয়ে নেবো। কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমাণিত করলো কান্তা। নিজের সিদ্ধান্ত থেকে এক পাও এদিক থেকে ওদিক হলো না সে। কতো দিন, আর কতো দিন সহ্য করতাম আমি? তখন রাগ হতো, নিজের ওপর, নিজের ভাগ্যের ওপর। কেন, কেন এতো মেয়ে থাকতে আমি কান্তাকেই বিয়ে করলাম। আসতে আসতে কান্তার ছেলে প্রতীক আমার ঘৃণার পত্র হয়ে গেলো। রাগে, দুঃখে, ঘৃণায় রোজ রাতে মদ খেয়ে এসে মা, বেটাকে মারধর করতাম। বিয়ের চার বছর পর কান্তা চলে গেলো আমাকে আর নিজের ছেলেকে ফেলে রেখে। তখন ভেবেছিলাম প্রতীককে কোনো অনাথ আশ্রমে দিয়ে আসবো। কিন্তু সমাজের ভয় সেটা করিনি। আমি আবার বিয়ে করলাম। প্রতীক প্রথমে সৎ বাপ পেয়েছিল, এবার সৎ মা পেলো। অত্যাচারের সীমা থাকলো না তার ওপর। মাঝে মাঝে মায়া যে হতো না আমার তা নয়। প্রতীকের যখন আট বছর বয়স তখন তাকে আমি বোর্ডিং স্কুলে দিয়ে আসি। প্রতীকের খরচ আর সংসারের খরচ। চাপ বাড়তে থাকে আমার ওপর। স্ত্রীর সাথে রোজ অশান্তি। আমার নিজের ছেলে পিটারও বড় হচ্ছিলো। তার পেছনে খরচ করা বেশি বাঞ্ছনীয় মনে করলাম আমি।’
খানিক থামলেন মিস্টার নেলসন। চায়ে আরও দু’ চুমুক দিয়ে বললেন- ‘ছোট থেকেই প্রতীকের মধ্যে একটা অদ্ভুত গুণ দেখেছিলাম। আমার কাছে বেধড়ক মার খাওয়ার পর নিজের ঘায়ে সে নিজেই মলম লাগাতো। কারুর সাহায্য নিতো না সে। মার খাওয়া নিজের নিয়তি ভেবে নিয়েছিল সে। প্রতীক জানতো তার মায়ের মারা যাওয়ার পর আর কেউ নেই যে তার শরীরের ঘায়ে মলম লাগবে। হঠাৎ একদিন প্রতীকের বোর্ডিং স্কুল থেকে ফোন আসে। সে নাকি নিজের শরীরে নিজেই আঘাত দেয়। আমি ছুটে গেলাম সেখানে। ডক্টর দেখানো হলো। বেশ কিছু মাস তার চিকিৎসা চললো। প্রতীককে বেশ কিছু মাস নিজের সাথে রাখলাম। নিজের স্ত্রীকে আমি বলে দিয়েছিলাম যে সে যদি প্রতীককে ভুলেও কিছু বলে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমার স্ত্রী রাগ করে বাড়ি ছেড়ে নিজের বাপের বাড়ি চলে গেলো, নিজের ছেলেকে নিয়ে। মৃত্যুঞ্জয় বাবু, সত্যি বলতে প্রতীক আমার কেউ না। কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তার সাথে। মানছি যে আমি তাকে মারধর করেছি, টর্চার করেছি তাকে। কিন্তু আগলে রাখারও তো চেষ্টা করেছি। আমার বদলে অন্য কেউ হলে করতো কি? মনে তো হয় না করতো। প্রতীক সুস্থ হয়ে গিয়েছিলো। বেশ ভালোই ছিলো সে। যতোটা সম্ভব তাকে ভালোবাসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আপনি সেটাকে আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করাও বলতে পারেন। কিছু যায় আসে না আমার। হ্যাঁ, আমি ছোট্ট, নির্বোধ শিশুর ওপরে নিজের দুঃখে, আক্রোশে অত্যাচার করেছি। সেটারই প্রায়শ্চিত্ত করছিলাম আমি। প্রতীক মেডিকেল পড়তে চেয়েছিলো। পরীক্ষাতে বসলো। পাস হয়ে গেলো। পি.এম.সি.এইচ. মানে পাটনা মেডিকাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে তার অ্যাডমিশন হলো। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনাতে ভালো ছিলো। কলেজেও খুব নাম করলো। সেখানকার প্রফেসররা তার এক্সট্রা অর্ডেনরি ট্যালেন্ট দেখে আশ্চর্য হতো। আসলে ছোট বেলা থেকে নিজের চিকিৎসা নিজেই করতে শিখেছিলো সে, সেটাই মেডিকাল কলেজে কাজে এলো। কিন্তু….কিন্তু আমি আর পারলাম না, মৃত্যুঞ্জয়বাবু। আমি আর পারলাম না খরচা চালাতে। আমার নিজের ছেলের পেছনে দিনে দিনে খরচ বাড়ছিলো। প্রতীকের মেডিকেল পড়ার জন্য আমি ব্যাংক থেকে লোন নিই নি। পাছে যদি লোনের টাকা দিতে না পারি। প্রতীককে দু’বছর মেডিকাল পড়াতে পেরেছিলাম। এই দু’বছরে খুবই ভালো রেজাল্ট করেছিলো সে। তার পর থেকে আবার তার মধ্যে পরিবর্তন দেখলাম। বেশ কিছু দিন সে বাড়িতে থাকলো। সারা দিন গুম হয়ে থাকতো। কারুর সাথে কথা বলতো না। সত্যি বলতে আমাকে ঘৃণা করতো সে। হঠাৎ এক দিন আমায় বলল যে সে পাটনাতে থেকে চাকরী করতে চায়। পাটনাতেই বাড়ি ভাড়া করে থাকবে। আমি আর বাধা দিলাম না তাকে। প্রতীক চলে গেলো পাটনা। প্রায় দু’বছর হলো সে পাটনাতেই আছে। শুরু শুরুতে তার সাথে যোগাযোগ ছিলো। কিন্তু আস্তে আস্তে সেটাও শেষ হয়ে গেলো। ফোন করলে ফোন তুলতো না সে। কালেভদ্রে যদি কোনো দিন ফোন তুলতো তো এক মিনিটের বেশি কথা বলতো না। শুনেছিলাম যে সে জব চেঞ্জ করেছে বাড়ি চেঞ্জ করেছে। তার নতুন অফিস আর বাড়ির ঠিকানা আমি জানতাম না। এক দিন তাকে ফোন করলাম, লাগলো না। বেশ কিছু দিন তাকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ হলাম। বুঝে গেলাম যে সে হয়তো নিজের ফোন নম্বর চেঞ্জ করেছে। আমাকে দিতে চায় না নিজের নতুন নম্বর। রাগ হলো তার ওপর। এতো করার পরেও এই ব্যবহার? পরের সন্তান পরেরই হয়। তাকে নিজের নাম দিয়েছি, আমার কেউ ছিলো না সে, তাও সারা জীবন আগলে রেখেছি। না, এই দুর্ব্যবহার আমার সহ্য হলো না। রাগে দুঃখে আমিও তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করলাম। সে কোথায় আছে, কী করছে, জানবার কোনো চেষ্টাই করলাম না আমি। পাটনাতে আমার অনেক পরিচিতি আছে। ইচ্ছে হলেই তার খোঁজ খবর নিতে পারতাম। কিন্তু নিলাম না। প্রায় আট মাস ধরে তার কোনো খবর নেই আমার কাছে। হঠাৎ আজ সকালে আপনি আমার বাড়িতে এসে বললেন যে প্রতীকের এই অবস্থা। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মৃত্যুঞ্জয়বাবু, অনেক ধন্যবাদ। আপনি আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে দিলেন।’ শেষ কথাটা বৃদ্ধ দু’হাত জোর করে মৃত্যুঞ্জয়কে বললেন। তাঁর দু’চোখ বেয়ে বেরিয়ে এসেছিলো অশ্রুধারা।
প্রতীকের অতীতের বর্ণনা করে মিস্টার নেলসন নিচে চলে গেলেন। মৃত্যুঞ্জয় একটা সিগারেট ধরিয়ে অন্বেষাকে বলল- ‘শেষ আট মাস ধরে প্রতীক মিস্টার নেলসনের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি। খুব সম্ভব তখন থেকেই এই রোগটা আবার তাকে আক্রমণ করেছিলো।’
খানিক চুপ থাকার পর অন্বেষা বলল- ‘এই কাপগুলো নিচে রেখে আসি মৃত্যুঞ্জয়দা। তুমি এখানেই থেকো, যেও না কোথাও।’
অন্বেষা চায়ের সরঞ্জাম নিয়ে নিচে চলে গেলো। মৃত্যুঞ্জয় ছাদময় পায়চারি শুরু করলো। সূর্যাস্ত হয়ে গেছে। আশেপাশের বাড়িগুলোতে বাতি জ্বলে গেছে সেটা দেখতে পেলো মৃত্যুঞ্জয়। ছাদের দরজার ঠিক ওপরে একটা বাতি ছিলো, সেটা জ্বালিয়ে দিলো মৃত্যুঞ্জয়। অন্বেষা হাসিমুখে ছাদে ফিরে এলো। মৃত্যুঞ্জয় দেখলো তার হাতে একটা লিপিস্টিক।
‘হঠাৎ লিপিস্টিক কেন?’ জিজ্ঞেস করলো মৃত্যুঞ্জয়।
‘কী করবো? অনেক খুঁজেও মার্কার পেলাম না যে। তাই অগত্যা এটাই আনতে হলো।’
‘কী করবে এখন লিপিস্টিক দিয়ে?’
‘বলছি। নিজের বাঁ হাতটা দাও।’
মৃত্যুঞ্জয়ের বাঁ হাতটা নিজের বাঁ হাতের ওপর রাখলো অন্বেষা। সাদা প্লাস্টার মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে। নিজের লাল লিপিস্টিক দিয়ে সাদা প্লাস্টারের ওপর অন্বেষা লিখলো- ‘গেট ওয়েল সুন, মৃত্যুঞ্জয়দা।’
মৃত্যুঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল- ‘মৃত্যুঞ্জয়দা, ইউ আর জিনিয়াস।’
=সমাপ্ত=